আমি যখন ক্লাস টু-তে উঠবো তখন বাবার বদলি হয়ে গেলো ‘ইওয়াকি’তে। আমার খুব খারাপ লাগছিলো স্কুলের বন্ধুদের ছেড়ে যেতে। নতুন জায়গার কথা ভেবে একটু ভয়ও পাচ্ছিলাম।
‘ইওয়াকি’র ‘ফুজিমা’ স্কুলে আমাকে ভর্তি করে দেওয়া হলো। প্রথম দিন টিচার আসার আগেই ক্লাসে গিয়ে হাজির হলাম। ক্লাসের পেছনে কয়েকটা ছেলে জটলা পাকিয়ে কি নিয়ে যেন কথা বলছিলো। আমি যখন শেষ দিকের একটা চেয়ারে বসতে যাব, তখন কেউ একজন চেয়ারটা টান দিয়ে সরিয়ে নিল। আর আমি ধপ্পাস করে মাটিতে পড়ে গেলাম, সাথে সাথে সবাই হা-হা করে হেসে উঠলো। রাগে, দুঃখে, লজ্জায় আমার চোখে পানি চলে আসছিলো। কিন্তু তখনি টিচার চলে আসলো বলে চোখের পানি সামলে কোনোমতে উঠে বসতে বসতে আড় চোখে দেখে নিলাম কে আমাকে ফেলে দিয়েছে।
ছেলেটার চোখ লম্বা চুলে ঢেকে ছিল। আর হাসিটা ছিল একান থেকে ওকান পর্যন্ত বিস্তৃত। দেখেই আমার গা জ্বলে গেলো। পরে জানতে পেরেছিলাম ওর নাম ‘হিরোতো’।
নতুন স্কুলে আমারতো কোনো বন্ধু হলোই না, উল্টো প্রত্যেক দিন হিরোতো আমাকে সবার সামনে বিভিন্ন ভাবে অপদস্থ করতে থাকলো। একদিন এসে আমার দিকে মুঠ করা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো ‘নাও’। আমিও সরল মনে হাত পাতলাম। ও তখন আমার হাতে নরম নরম কিলবিলে একটা টিকটিকি ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। আমি লাফিয়ে, চিৎকার করে, কেঁদেকেটে অস্থির। পরের দিন আমার চুলে চুইংগাম লাগিয়ে দিলো। সেটা তিন বার শ্যাম্পু করার পরেও উঠছিলো না বলে চুল ছোট করে কেটে ফেলতে হলো। আর খেলার ক্লাসে আমাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেওয়াতো ছিল প্রতি দিনের ঘটনা।
আমি দাঁতে দাঁত চেপে সব কিছু সহ্য করে শীতের ছুটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। ছুটি হলেই মা আমাকে নিয়ে ‘কাগোশিমা’ বেড়াতে যাবে।
ছুটির আগের দিন ক্লাসের পর আমি যখন ব্যাগে বই খাতা ঢোকাচ্ছিলাম, তখন হিরোতো এসে ঐ দিনের মতো মুঠ করা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো ‘নাও’। আমি সতর্ক হয়ে খানিকটা পিছিয়ে দাঁড়ালাম। ও তখন আমার ডেস্কের উপর কি যেন একটা রেখে অনেক ক্ষণ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে দৌড়ে চলে গেলো। আমি এক পা এক পা করে ডেস্কের কাছে গিয়ে জিনিষটা কি বোঝার চেষ্টা করি। হাতে নিয়ে দেখলাম একটা টিস্যু পেপারে মোড়ানো দুইটা বড় বড় ঝিনুক। একটা গোলাপী আর অন্যটা আকাশী রং করা। টিস্যু পেপারটাতে লেখা ‘তুমি আর আমি’। সঙ্গে সঙ্গে আমার মনটা অদ্ভুত খুশীতে ভরে গেলো।
খুশী খশী মনে ৯/৩/২০১১-তে ‘কাগোশিমা’র উদ্দেশ্যে আমি রওনা দিলাম মা’র সাথে। পৌঁছে আমরা খালার বাসায় উঠলাম। প্রথম দিন বিশ্রাম নিয়ে কাটালাম।
এগারোই মার্চ ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প আর সুনামি তছনছ করে দিলো জাপানের উত্তর-পূর্ব সমুদ্র উপকূল। প্রথম পাওয়া ৩৫০টা লাশের মধ্যে একটা ছিলো হিরোতোর লাশ।
‘ইওয়াকি’র ‘ফুজিমা’ স্কুলে আমাকে ভর্তি করে দেওয়া হলো। প্রথম দিন টিচার আসার আগেই ক্লাসে গিয়ে হাজির হলাম। ক্লাসের পেছনে কয়েকটা ছেলে জটলা পাকিয়ে কি নিয়ে যেন কথা বলছিলো। আমি যখন শেষ দিকের একটা চেয়ারে বসতে যাব, তখন কেউ একজন চেয়ারটা টান দিয়ে সরিয়ে নিল। আর আমি ধপ্পাস করে মাটিতে পড়ে গেলাম, সাথে সাথে সবাই হা-হা করে হেসে উঠলো। রাগে, দুঃখে, লজ্জায় আমার চোখে পানি চলে আসছিলো। কিন্তু তখনি টিচার চলে আসলো বলে চোখের পানি সামলে কোনোমতে উঠে বসতে বসতে আড় চোখে দেখে নিলাম কে আমাকে ফেলে দিয়েছে।
ছেলেটার চোখ লম্বা চুলে ঢেকে ছিল। আর হাসিটা ছিল একান থেকে ওকান পর্যন্ত বিস্তৃত। দেখেই আমার গা জ্বলে গেলো। পরে জানতে পেরেছিলাম ওর নাম ‘হিরোতো’।
নতুন স্কুলে আমারতো কোনো বন্ধু হলোই না, উল্টো প্রত্যেক দিন হিরোতো আমাকে সবার সামনে বিভিন্ন ভাবে অপদস্থ করতে থাকলো। একদিন এসে আমার দিকে মুঠ করা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো ‘নাও’। আমিও সরল মনে হাত পাতলাম। ও তখন আমার হাতে নরম নরম কিলবিলে একটা টিকটিকি ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। আমি লাফিয়ে, চিৎকার করে, কেঁদেকেটে অস্থির। পরের দিন আমার চুলে চুইংগাম লাগিয়ে দিলো। সেটা তিন বার শ্যাম্পু করার পরেও উঠছিলো না বলে চুল ছোট করে কেটে ফেলতে হলো। আর খেলার ক্লাসে আমাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেওয়াতো ছিল প্রতি দিনের ঘটনা।
আমি দাঁতে দাঁত চেপে সব কিছু সহ্য করে শীতের ছুটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। ছুটি হলেই মা আমাকে নিয়ে ‘কাগোশিমা’ বেড়াতে যাবে।
ছুটির আগের দিন ক্লাসের পর আমি যখন ব্যাগে বই খাতা ঢোকাচ্ছিলাম, তখন হিরোতো এসে ঐ দিনের মতো মুঠ করা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো ‘নাও’। আমি সতর্ক হয়ে খানিকটা পিছিয়ে দাঁড়ালাম। ও তখন আমার ডেস্কের উপর কি যেন একটা রেখে অনেক ক্ষণ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে দৌড়ে চলে গেলো। আমি এক পা এক পা করে ডেস্কের কাছে গিয়ে জিনিষটা কি বোঝার চেষ্টা করি। হাতে নিয়ে দেখলাম একটা টিস্যু পেপারে মোড়ানো দুইটা বড় বড় ঝিনুক। একটা গোলাপী আর অন্যটা আকাশী রং করা। টিস্যু পেপারটাতে লেখা ‘তুমি আর আমি’। সঙ্গে সঙ্গে আমার মনটা অদ্ভুত খুশীতে ভরে গেলো।
খুশী খশী মনে ৯/৩/২০১১-তে ‘কাগোশিমা’র উদ্দেশ্যে আমি রওনা দিলাম মা’র সাথে। পৌঁছে আমরা খালার বাসায় উঠলাম। প্রথম দিন বিশ্রাম নিয়ে কাটালাম।