রাহাত ঢাকা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছিল। আসলে খুঁজছিল। প্রায় আধ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর খুঁজে পায় সে। তার আজকের শিকারটি লম্বা এবংসুন্দরী।বাদাম খেতে খেতে এগিয়ে যাচ্ছে। চেহারায় বোকা বোকা একটা ভাব আছে। বয়স খুব বেশি হবে না। মনে হয় কলেজে পড়ে। সে যখন মেয়েটার পাশ ঘেঁষে এগিয়ে যাওয়ার সময় আস্তে করে জায়গা মত হাত দিয়ে দেবে, তখন মেয়েটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অস্বস্তিতে কুঁকড়ে যাবে। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারবে না। চমৎকার, এই তো চাই।
বহুদিন ধরেই কম বয়সী, মিষ্টি কিন্তু বোকা চেহারার মেয়েদের গায়ে হাত দিয়ে আসছে রাহাত। কিন্তু এখনো ভীঁড়ের মধ্যে মিশে মেয়েটার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় টান টান উত্তেজনা অনুভব করে সে। ধমনীর মধ্যে রক্তকণাগুলো মনে হয় আলোর বেগে ছুটছে। আর দু’জন মানুষ পার করলেই মেয়েটার ঠিক পেছনে চলে যাবে রাহাত।
এরপরের ঘটনাগুলো ঘটল চোখের নিমেষে। পেছন থেকে মেয়েটার বুকে আলতো একটা চাপ দেওয়া মাত্র মেয়েটা ঘুরে দাঁড়িয়ে তীব্র দৃষ্টিতে সরাসরি তাকায় রাহাতের চোখের দিকে। হঠাৎ করে ভয়ের একটা শিহরণ খেলে যায় রাহাতের শরীরে। হাত –পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। কিন্তু চেহারায় সেটা প্রকাশ পায় না। নির্বিকার মুখে সেও তাকিয়ে থাকে মেয়েটার চোখের দিকে। মেয়েটা হাত তোলে চড় মারার জন্য। রাহাত প্রস্তুত ছিল। তাই সে খপ করে মেয়েটার হাত ধরে ফেলে, আর কিছু না ভেবেই কষে একটা চড় বসিয়ে দেয় মেয়েটার গালে। এবার মেয়েটা পা চালানো শুরু করে। ঝড়ের বেগে লাথি মারতে মারতে চিৎকার করতে থাকে, ‘মা.. মা.. আমাকে ফেলে এতো সামনে চলে গেছ কেন? এক্ষুনি ফিরে আস’। এবার রাহাত বুঝতে পারে বোকা-সোকা মেয়েটার রুখে দাঁড়াবার মতো এত সাহস কোথা থেকে এসেছে। কি করবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাহাতের ওপর চড়, কিল, ঘুষির বৃষ্টি শুরু হলো। মেয়েটার মায়ের সাথে যোগ দিল অতি উৎসাহী পথচারিরা।
সেদিন রাহাত কিভাবে বাড়ি ফিরেছিল সে মনে করতে পারে না।
ঐ দিনের ঘটনার দশ বছর পর একদিন খবরের কাগজের পাতা উল্টানোর সময়, ইভ টিজিং-এর জন্য আত্মহত্যার একটা খবর পড়তে গিয়ে হঠাৎই থমকে যায় মেয়েটা। ব্যস্ততার মাঝেও অনেকটা সময় নিয়ে চিন্তা করে তার নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে। তার খুব জানতে ইচ্ছা হয় ঢাকা কলেজের সামনের ঐ ছেলেটা গণপিটুনি খাওয়ার পর আর কখনো কোন মেয়ের সাথে ওসব করার চেষ্টা করেছিল কিনা।
মেয়েটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে, ছেলেটার সাথে তার জীবনের ২০টি মিনিট কেটেছে। ভয়ঙ্কর ২০টি মিনিট। ভয়ে, রাগে, দুঃখে, লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করেছিল সেদিন। ছেলেটাকে সে এতদিন মনে রেখেছে। এবং তীব্র ঘৃণা নিয়ে তাকে সারা জীবন মনে রাখবে।