Wednesday, May 25, 2011

কাছে থাকুন

শুক্রবার দেখা করেছিলাম আমরা। অনেক দিন পর সবার দেখা হল। তুহীনের যেই মেয়েটার সাথে নতুন সম্পর্ক হয়েছে তাকে নিয়ে এসেছিল আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। সুন্দর চেহারার লক্ষী মেয়ে, নাম নাবিলা।
সাদাত প্রায় তিন বছর পর দেশে ফিরেছে। এই কয় বছর কারো সাথে যোগাযোগ রাখেনি। ঢাকায় এসে হঠাৎ এক দিন সবাইকে ফোন করে বললো দেখা করতে। আর আমরাও নাচতে নাচতে গেলাম ।
আমি আর আদনান পৌঁছে দেখি বর্ণা আর নাশিতা আগেই গিয়ে একটা টেবিল দখল করে বসে আছে। নাশিতা ওর বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে আসেনি দেখে খুব খুশি হলাম। ছেলেটাকে সহ্য করতে পারি না আমরা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাকিরাও এসে পড়লো। সন্ধ্যা পার হয়ে যাচ্ছিল বলে বেশি দেরী না করে প্রথমেই খাবার অর্ডার করলাম। তারপর শুরু হল গল্প করা আর তারস্বরে হাসাহাসি।
কিন্তু আমাদের আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। হঠাৎ করেই তুহীন আর নাবিলার ঝগড়া লেগে গেলো। তুহীন রাগ করে মোবাইলের সাথে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা শুরু করলো। আর নাবিলা কাকে যেন একটার পর একটা মেসেজ পাঠাতে থাকলো।
এর মাঝে নাশিতার ফোন আসলো বিরক্তিকর বয়ফ্রেন্ডটার কাছ থেকে। টেবিলের এক কোণে বসে ফিসফিস করে ফোনে কথা বলা শুরু করলো ও।
আমরা বাকি কজন কথা চালানোর চেষ্টা করলাম কিছুক্ষণ, কিন্তু ঠিক জমলো না আর। এতো দিন পর এসে সাদাত নিজেকে আমাদের সাথে খাপ খাওয়াতে পারছিলো না। একটু পরে সে মোবাইলের ইন্টারনেট ব্যাবহার করে তার ইংল্যান্ডের বন্ধুদের সাথে চ্যাট করা শুরু করলো।
আমি, বর্ণা আর আদনান গল্প করতে থাকলাম। আদনান আমাদেরকে ওর নতুন ফোনটা বের করে দেখালো, যেটার সাথে ৮ মেগা পিক্সেল ক্যামেরা আছে। ছবিও তুললো বেশ কয়টা। তারপর মাত্র তোলা ছবিগুলো দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো বর্ণা আর আদনান।
কি আর করা, আমিও আমার ফোন বের করে কনট্যাক্ট লিস্ট থেকে অপ্রয়োজনীয় নম্বরগুলো মুছে ফেলতে শুরু করলাম।

2 comments:

  1. মোবাইলের কাছে রাখার চেষ্টা খারাপ নয়।

    গল্পে একটা স্ববিরোধীতা রয়েছে। সবাইকে বিদেশ থেকে এসে এত তারাতারি একত্র করতে পেরেছে মোবাইল ফোন। এটা কাছে রাখার নামান্তর বৈকি।

    মূল ভাবটা একটা গল্পের মাধ্যমে বলি। এক দেশে এক পরিবার ছিল। সদস্য ছিল ১০ জন। সবাই একটি ডাইনিং টেবিলে বসে একত্রে খাওয়া দাওয়া করতো। হাসাহাসি করতো-গল্প করতো।

    পৃথিবীতে তখন রেডিও আবিস্কার হয়েছে। একদা তাদের পরিবারে একটি রেডিও এলো। সবাই একত্রে এক টেবিলে খাওয়া দাওয়া করতো বটে, তবে সবাই কান খাড়া করে রাখতো রেডিওর দিকে। তাই হাসাহাসি-গল্পে বাধ সাধলো।

    এরপর পৃথিবীতে টেলিভিশন এলো। পরিবারটিতে টেলিভিশন এলো অনেকগুলো। তখন ডাইনিং টেবিলে ধুলো পড়ে হাহাকার। কেউ নেই যেন! কিন্তু আছে। সবাই নিজেদের ঘরে বসে নিজেদের টেলিভিশনে মগ্ন।

    আর সবাই আলাদা হয়ে আধুনিক হয়ে সুখে থেকে 'নিজ' হয়ে রইলো। খারাপ কি? রইলো তো। আমরা যে মধ্যবিত্ত! নমস্কার তো ভেতরের জিনিষ!

    ReplyDelete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete