Wednesday, January 18, 2012

ছায়ানটের পঞ্চাশ বছর (সনজিদা খাতুনের সাক্ষাতকার)

সনজিদা খাতুন:


যেদিন ছায়ানটের পঞ্চাশ বর্ষপূর্তি আনুষ্ঠান হচ্ছিল, সেদিন ছেলে-মেয়েদের চোখে জল ছিলআমিতো মনে করি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য এখানেইছায়ানট গড়েছি এবং ছায়ানটের ছেলে-মেয়েদেরকে পঞ্চাশ বছর ধরে শুদ্ধ সংস্কৃতির শিক্ষা দিয়ে আসছি তারাই প্রকৃত বাঙালী হয়ে বিশ্বের কাছে বাঙালী হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবে ছায়ানটের নিয়ম হলো, সপ্তাহে দুটো দিন মেয়েদের শাড়ী আর ছেলেদের পাঞ্জাবী পরে আসতে হয় তারা শার্ট-প্যান্ট, কোট-টাই পরে আসতে পারে না এতে করে তাদের মনের ওপর একটা প্রভাব পড়ছেছায়ানটের একটা কর্মীবাহিনী দাঁড়িয়ে গেছে তারা দেশে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বিদেশেও বাঙালীর শুদ্ধ সংস্কৃতির পরিচয় তুলে ধরছে এরাই ভবিষ্যতে ছায়ানটকে এগিয়ে নিয়ে যাবে

২০০১ সালে যখন রমনা বটমূলের পহেলা বৈশাখ আনুষ্ঠানে বোমা হামলা হলো,  তখন আমরা বুঝতে পারি, আমাদের এই শিক্ষাটা শেকড় পর্যন্ত যাচ্ছে না বাঙালীকে প্রথমে মানুষ হিসেবে, বিশ্বমানব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে তখন আমরা শিশুদের জন্য একটি স্কুল করার সিদ্ধান্ত নেই এই স্কুল, নালন্দায় বাচ্চাদের বাংলা শেখানো হয়, পাশাপাশি তারা ইংরেজিতেও দক্ষতা অর্জন করে তারা গণিত বিজ্ঞান শেখেএর মধ্যে আমাদের আরো একটি নতুন কার্যক্রম শুরু হয়েছে কার্যক্রমটির নাম শিকড় সেখানে আসে অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিশুরা তাদেরকে নাচ-গান শেখানো হয় তারা জানে না আট কড়াই কি আট কড়াই হলো আট রকমের কড়াই ভাজা এসব আহারের মধ্য দিয়ে ওরা গ্রামীণ সংস্কৃতির পরিচয় লাভ করে

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরামুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা নামে একটা দল গঠন করি এই দলে ছায়ানটের অনেক শিল্পী ছিল আমি, ওয়াহিদুল, বেণু আমরা সবাই মিলে শুরু করেছিলাম এটা আমি ছিলাম সভাপতি, বেণু ছিল সাধারণ সম্পাদক সংস্থারই একটি দল নিয়ে বেণু, শাহীন সামাদ, নায়লা ওরা বেরিয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প এবং শরণার্থী শিবিরে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষকে গান শুনিয়ে তারা উদ্বুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে এই দলটি নিয়েই পরবর্তীতে তৈরি হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রমুক্তির গান এইভাবে আমরা একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম

পাকিস্তান আমলে, মোনেম খাঁ সরকারের সময় আমাকে, এটাকে ইংরেজিতে বলেপানিশমেন্ট ট্রান্সফার দেওয়া হয়েছিল আমি ছায়ানট করি বলেই এই শাস্তির ব্যবস্থা করেছিল সরকার এর ফলে একটা বড় সময় আমাকে আমার ছেলে-মেয়েদের ছেড়ে থাকতে হয়েছিল কিন্তু আমি দমে যাইনি ছেলে-মেয়েরাও কখনো কোন অভিযোগ করেনি তারা কখনো কিছু চায়নি


মুক্তিযুদ্ধের পরে নতুন করে ছায়ানট শুরু করি আমরা ছায়ানট সব সময় সচেতন ভাবে অরাজনৈতিক গঠনমূলক সাংস্কৃতিক সঙ্গঠন ছিল এবং এখনো আছে

No comments:

Post a Comment