Sunday, November 25, 2012

ইভ্যানেসেন্স


১৯৯৫ সালে এমি লি নামের ১৪বছর বয়সী এক প্রতিভাবান কিশোরী হঠাৎ করেই ঠিক করল সে একটা রক ব্যান্ড তৈরি করবে। ১৪বছর বয়সেই সে উচ্চঙ্গ আঙ্গিকে পিয়ানো বাজানো শিখেছিল। গানও গাইতে পারত চমৎকার। একই বয়সী কিশোর বেন মুডির সাথে মিলে এইমি তৈরি করে ফেলল ব্যান্ডটি। ভাবনা চিন্তা করে ব্যান্ডের নাম ঠিক করা হল ইভ্যানেসেন্স। লিটল রক শহরের এই ব্যান্ড ব্যাপক জনপ্রিয় হয় সেই এলাকায়।

তৈরি হল রকের নতুন এক ধারা। খুব অল্প সময়েই পুরো পৃথিবীর রকভক্তদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠলো ইভ্যানেসেন্স। ২০০৫ সালে প্রথম অ্যালবাম 'ফলেন' মুক্তির পর পরই পেয়ে গেল ৭টি মনোনয়নসহ ২টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড।

এরপরই ভাঙ্গন ধরতে শুরু করে ব্যান্ডে। ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চলে ব্যান্ড সদস্যদের যাওয়া আসা। এর মধ্যেই এইমি শক্ত হাতে হাল ধরে রেখে চালিয়ে যায় গান। কঠোর পরিশ্রমের ফলে ২০০৬ সালে মুক্তি পায় ইভ্যানেসেন্সের ২য় স্টুডিও অ্যালবাম 'দ্য ওপেন ডোর'। পরিশ্রমের ফলও হল সেরকম। বিলবোর্ডের প্রথম ২০০ অ্যালবামের তালিকার শীর্ষ স্থান দখল করল অ্যালবামটি।

প্রায় ৫ বছর উধাও থাকার পর ২০১১ সালের শেষে মুক্তি পায় ব্যান্ডটির ৩য় স্টুডিও অ্যালবাম, 'ইভ্যানেসেন্স'। নতুন লাইন আপ নিয়ে ফেরত এসে এবারও বাজিমাত করে এইমি। এই অ্যালবামটিও বিলবোর্ড অ্যালবাম তালিকার শীর্ষে চলে আসে। শুধু তাই না, আরো ৪টি তালিকার শীর্ষ স্থান দখল করে এটি। বর্তমানে এই অ্যালবামের প্রমোশনের জন্য ব্যান্ডটি বিভিন্ন জায়গায় ট্যুর করে বেড়াচ্ছে। 

সাইকাডেলিক রক..


এলএসডি। পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত ড্রাগ। এলএসডি নিলে নাকি আলোর অষ্টম রং দেখা যায়। তবে এলএসডি না নিয়েও যদি এর প্রভাব অনুভব করার কোনো উপায় বের করা যেত, তবে নিঃসন্দেহে সেই উপায়টার নাম হতো সাইকাডেলিক রক। এটা মিউজিকের নতুন এক অনুভূতির নাম।

শুরুটা হয়েছিল ষাটের দশকের মাঝামাঝি অ্যামেরিকা আর ইংল্যান্ডে। এলএসডি এবং এই জাতীয় হ্যালুসিনোজেনিক মাদকের নেশাকে আরো প্রবল, পাকাপোক্ত করার উদ্দ্যেশ্যেই তৈরি করা হয় এই জনরা। এই ধরণের মিউজিকে বেইজ গিটার, ড্রাম, ইলেকট্রনিক অরগ্যানের পাশাপাশি ব্যাবহার করা হয় ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র সেতারও। ব্লুজ, রক, জ্যাজ, ভারতীয় রাগ, আরএনবি এইসব জনরার প্রভাব রয়েছে সাইকাডেলিক রকে।

এই জনরার পথ দেখিয়েছে দ্য বিটলস, দ্য ডোরস, পিঙ্ক ফ্লয়েড, বব ডিলানের মতো কিংবদন্তীরা। ১৯৬৯ সালে উডস্টক রক ফেস্টিভ্যালের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছায় সাইকাডেলিক রক। বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের বারুদ ছড়াতে শুরু করে এই ধারা। নানা অসঙ্গতি-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে তরুণ সমাজ।

সাইকাডেলিক রক থেকে জন্ম নেয় সাইকাডেলিক পপ এবং সাইকাডেলিক সোল জনরা দু'টি। এছাড়াও ব্লুজ রক, লোকজ সঙ্গীতের সাথে প্রগ্রেসিভ রক আর হার্ড রকের সংমিশ্রণ ঘটায় সাইকাডেলিক রক। জন্ম নেয় 'হেভি মেটাল', যা এসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় জনরাগুলোর একটি।

Saturday, November 24, 2012

ব্রিটিশ গায়িকা ডাইডো

পুরো নাম, ডাইডো ফ্লোরিয়ান ক্লাউড ডি বর্নভিএইল ওম্যালি আর্মস্ট্রং। এত লম্বা নাম হওয়ার কারণেই ডাইডোর পুরো নাম কেউ জানে না। দেখতে বাচ্চাদের মতো মিষ্টি কিন্তু গলার স্বর বেশ ভারি আর পরিণত। কবি মা আর প্রকাশক বাবার ঘর আলো করে ১৯৭১ সালের ক্রিসমাস-ডেতে জন্ম নেন ডাইডো। বাবা-মা শখ করে বিশাল নাম রাখলেও এই নামের বিড়ম্বনা কম ছিল না। নামের জন্য ছোটবেলায় নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে ডাইডোকে।

ডাইডো প্রথম ডেমো ট্র্যাক রেকর্ড করেন ১৯৯৫ সালে। এই ট্র্যাকগুলোকেই একসাথে করে তৈরি হয় অ্যালবাম 'অডস অ্যান্ড এন্ডস'। 
এই অ্যালবামের প্রথম গান 'হিয়ার উইথ মি' টেলেভিশন শো রসওয়েলের থিমসং হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর পরপরই ২০০০ সালে অ্যামেরিকান র‌্যাপার এমিনেম তাঁর 'স্ট্যান' নামের গানে ব্যাবহার করেন ডাইডোর 'থ্যাংক ইউ' গানের প্রথম কলি এবং সাথে সাথেই  ইংল্যান্ডের পাশাপাশি অ্যামেরিকায়ও তুমুল পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পায় ডাইডোর গন। এরপর আর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি।


পরের অ্যালবাম লাইফ ফর রেন্ট মুক্তি পায় ২০০৩ সালে। এবং মুক্তির প্রথম দিনেই এক লাখ বাহান্ন হাজার কপি বিক্রি হয় অ্যালবামটির। ইংল্যান্ডে সবচেয়ে ব্যাবসা সফল অ্যালবামের তালিকায় লাইফ ফর রেন্ট রয়েছে ৪ নম্বরে। এরপর একে একে বের হয় ডাইডোর অন্যান্য অ্যালবাম। কিন্তু প্রথম অ্যালবামগুলোর মত জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেনি পরেরগুলো।


২০১০ সালে 127 hours ফিল্মে এ আর রাহমানের কম্পোজিশনে ইফ আই রাইজ গানটি করেন ডাইডো, যা ৮৩তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন পায়। অ্যালবামের ব্যাপারে অমনোযোগী হয়ে পড়া ডাইডো আজকাল বিভিন্ন ফিল্মের জন্য গান করতেই পছন্দ করেন। কিন্তু ডাইডো ভক্তরা এখনো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে তাঁর নতুন অ্যালবামের জন্য।


Saturday, November 10, 2012

সুইসাইড নোট




স্বপ্নবুড়ির কোলে চড়ে যাব আমি রঙের দেশে,

সেখান থেকে কিনব আলো, সাজব ইন্দ্রধনুর বেশে,

আলোগুলো ছড়িয়ে দেব সবার মাঝে হেসে হেসে,

থাকবে সবাই আলোয় আলোয় আনন্দ আর সুখের রেশে,

তখন আমি হারিয়ে যাব, রাখবে না কেউ মনের পাশে,

আলোগুলো ফুরিয়ে গেলে খুঁজবে সবাই আমায় শেষে,

স্বপ্নবুড়ি আমায় তখন ঘুম পাড়াবে ভালবেসে।



Friday, November 9, 2012

ডেমি মুর...






১৬ বছর বয়সে হাইস্কুল পাস না করেই নেমে পড়েন মডেল হওয়ার প্রচেষ্টায়। ১৮বছর বয়সে তাঁর নগ্নছবি প্রকাশিত হয় একটি ম্যাগাজিনে। এই হলেন ডেমি গাইনস, যাঁকে আমরা চিনি ডেমি মুর নামে!! খুবই অসুখী আর বিশৃঙ্খল একটি ছেলেবেলা কাটিয়েছেন। যার প্রভাব স্বাভাবিক ভাবেই পড়েছে তাঁর বাকি জীবনের ওপর।

১৩ বছর বয়সে জানতে পারেন যাকে তিনি বাবা বলে জানেন, তিনি আসলে সৎবাবা। অন্যদিকে ছোটবেলা থেকেই মা-এর অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ তাঁকে ফেলে নানা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।

১৮ বছর বয়সে জীবনের প্রথম বিয়েটি করেন ডেমি। ফ্রেডি মুর নামের এই মিউজিশিয়ানের সাথে সংসার টেকে মাত্র ৫ বছর। এর ২বছর পরই বিয়ে করেন হলিউড সুপারস্টার ব্রুস উইলিসকে এবং জন্ম দেন তিনটি সন্তানের। এক যুগ সুখে সংসার করার পর এই বিয়েটিও ভেঙ্গে যায়। এরপর ২০০৫ সালে বিয়ে করেন তাঁর চেয়ে পাক্কা ১৬ বছরের ছোট তখনকার উঠতি হলিউড স্টার অ্যাশটন কুচারকে। ঠিক এক বছর আগে বিচ্ছেদ ঘটে এই জুটিরও।



এখন তিনি একাই আছেন। সিনেমা করেন না তেমন একটা। অবশ্য তার দরকারও নেই। ডেমির করা ৯০-এর দশকের সিনেমাগুলোর জন্যই দর্শকরা তাঁকে মনে রাখবে সারা জীবন। গোস্ট, ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল, আ ফিউ গুড মেন এবং স্ট্রিপটিজ করে আলোচনায় চলে আসা ডেমি মুর কখনোই হলিউড আলোচনা থেকে ছিটকে পড়েননি। ১১ই নভেম্বর এই সুন্দরীর ৫০ তম জন্মদিন। 

  


Monday, October 22, 2012

কথা

       লালমাটিয়ায় স্বাদ তেহারী ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ঈষাণ। মনে মনে ভাবছিল, ‘মেয়েটাকে দেখে তো অন্য রকম মনে হয়। কিন্তু এরও দেখি বাকি মেয়েগুলোর মতোই দেরি করা স্বভাব। ভাবতে ভাবতেই চোখের সামনে একটা রিক্সা এসে দাঁড়ালো। রিক্সা থেকে লাফিয়ে নেমে ভাড়া না দিয়েই বিরতিহীন ভাবে সরিবলা শুরু করল ইলানা। ঈষাণ হেসে ফেলে বলল, ‘ আগে ভাড়া দাও, তারপর সরি বোলো। তখন ইলানা বলে, ‘নাহ, আজকে রিক্সা করেই ঘুরবো চলো। ঈষাণ কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়ল রিক্সায়। মেয়েটার মধ্যে কি যেন আছে। খুব মজা করে কথা বলে। অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিষ নিয়ে কথা বলে। প্রতি মুহুর্তেই অবাক হতে হয়।
রিক্সাওয়ালাকে ঢাকা কলেজের দিকে যেতে বলে ইলানা ফিরল ঈষাণের দিকে।


ইলানা: গত ক্লাসে কি চির বন্ধুপুরোটা শিখিয়ে ফেলেছে?


ঈষাণ: হ্যাঁ। চিন্তা করো না, আগামী ক্লাসে আবারো ওটাই করাবে প্রথমে তারপর ধরবে এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়। ক্লাসটা মিস কোরো না। কারণ আগামী সপ্তাহ থেকেই রিহার্সেল শুরু হবে। আর কোরাসে থাকবে এই আকাশে আমার মুক্তি


ইলানা: হুম, এটা একটা সমস্যা। ক্লাসে যেতেই ইচ্ছা করে না। কিন্তু একবার গেলে আর ক্লাস থেকে বেরোতে ইচ্ছা করে না। এই আকাশে আমার মুক্তিগানটা মোটামুটি জানা আছে, ফাইন টিউনিং করলেই হয়ে যাবে।


এখন রিক্সাটা ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে বেঙ্গল গ্যালারির সামনে জ্যামে আটকে আছে।


ইলানা: জানো, একটা সময় প্রত্যেকদিন আসতাম বেঙ্গল গ্যালারিতে। আমার একটা বন্ধু আছে, নাম, তপু। ওর সাথে প্রত্যেকদিন বিকালে বের হয়ে এখানে এসে প্রদর্শনীগুলো দেখতাম আর অ্যাবস্ট্র্যাক্ট আর্টনিয়ে হাসাহাসি করতাম। সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতাম ঘাড় ধরে বের করে দেয় কিনা। হাস্যকর সব পেইন্টিংকে অ্যাবস্ট্র্যাক্ট আর্টের লেবেল লাগিয়ে সাজিয়ে রাখতো। আর ছবিগুলোর দামও ছিল সেরকম, সবচেয়ে সস্তাগুলোর দামই ছিল ৩০ হাজার টাকা। এখন যদি তিন বছরের একটা বাচ্চার হাতে তুলি ধরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সে-ও ওই ছবিগুলোর চেয়ে ভাল আঁকতে পারবে। আরো মজা হত যেসব দিন এক্সপেরিমেন্টাল আর্টওয়ার্কেরপ্রদর্শনী থাকত। উদ্ভট সব জিনিষ ক্যানভাসের ছবির ওপর আঠা দিয়ে লাগানো। সূতা, দড়ি থেকে শুরু করে জুতার সোল, কাঁচের টুকরা। কবে যে আন্ডারওয়্যার লাগিয়ে দেবে ক্যানভাসের ওপর এটা ভেবে আমি আর তপু হাসি চেপে রাখতে পারতাম না।    


ঈষাণ: আমিও এক সময় নিয়মিত প্রদর্শনীগুলোতে যেতাম। কিন্তু আমার এলাকা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবির হাট আর চারুকলার গ্যালারিতেই পড়ে থাকতাম। আমি অবশ্য তোমাদের মত এত কৌতুক খুঁজে পেতাম না। আর্ট কলেজের গ্যালারিতে সুন্দর সুন্দর ছবি থাকত সব সময়। যত সুন্দর ছবি, তার চেয়েও সুন্দর ছবির পেছনের ফিলোসফিটা। অ্যাবস্ট্র্যাক্ট আর্টগুলোও মোটেই হাস্যকর ছিল না। দেখলেই ছবির গভীরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করতো।


ইলানা: ধুর মিয়া, তোমরা হলে আঁতেল গোষ্ঠীর মানুষ। তোমরা তো পাবলিক টয়লেটের মধ্যেও শিল্প খুঁজে পাবে। 
যাক বাঁচা গেল, জ্যাম ছুটেছে। আরে দেখো দেখো, কোয়েলের ডিম বিক্রি করছে। ছোটবেলায় মা আমাকে কোয়েলের দু'টো ডিম একসাথে পোচ করে খাওয়াতো।

ঈষাণ: জানো, আমি আমার জীবনের প্রথম আয় করেছিলাম ডিম বিক্রি করে। আমার যখন তিন বছর বয়স, তখন টাকা উপার্যন করার দূর্দান্ত এক আইডিয়া আসল মাথায়। বাসায় ফ্রিজে সব সময়েই অনেকগুলো ডিম থাকতো। একদিন ফ্রিজ থেকে দু'টো ডিম চুরি করে নিচে গিয়ে মুদির দোকানদারকে বললাম 'এ্যাই মামা, ডিম কিনবে? তিন টাকা।' দোকানদার হেসে কুটিপাটি হলেও আমার কাছ থেকে ঠিকই ছয় টাকা দিয়ে দু'টো ডিম কিনেছিল। পরেরবার অবশ্য চুরি করতে গিয়ে মায়ের কাছে ধরা পড়ে গেছিলাম।
বাহ বেশ তাড়াতাড়িই ৩২ নম্বর ব্রিজ পার হয়ে গেলামতো। আরে আরে মজা দেখ। ওই যে ওই দিকে একটা ছেলে পাগলের মত বই আর কি কি যেন ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে লেকের পানিতে। পেছনেই মেয়েটা বসে বসে দেখছে। কত যে নাটক করতে পারে মানুষ! এসব হাস্যকর ছেলেমানুষীর কোন মানেই হয় না।

ইলানা: খবরদার! একদম ফালতু কথা বলবে না। মোটেই মজার কিছু হচ্ছে না ওখানে। ছেলেটার চেহারা দেখো। বোঝাই যাচ্ছে কি পরিমাণ রাগ আর কষ্ট নিয়ে কাজটা করছে সে। আর মেয়েটা পাথরের মত থমথমে মুখে বসে আছে, যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না ছেলেটা এমন করতে পারে। তুমি ওদের জায়গায় নেই। সুতরাং তুমি জান না কি পরিস্থিতিতে এমন করছে ওরা। খামাখা মানুষের কষ্টের মধ্যে মজা খোঁজার চেষ্টা কোরো না।


ঈষাণ: খুব অবাক করলে তুমি। তোমাকে দেখেতো খুবই প্র্যাক্টিকাল আর কাঠখোট্টা মনে হয়। বোঝাই যায় না এই সব সেন্টিমেন্টাল ব্যাপারে কিছু যায় আসে তোমার। আমিতো আরো মনে করলাম তুমি মজা পাবে দৃশ্যটা দেখে। এই জন্যই দেখালাম। সরি, বুঝতে পারিনি এতো খেপে যাবে।


ইলানা: এইটা একটা ভুল ধারণা। আমি প্র্যাক্টিকাল হতে পারি, কিন্তু তাই বলে অমানুষ না। আমি খুবই আবেগপ্রবণ। যখন প্রেমে পড়েছিলাম তখন প্রচুর পাগলামি করেছিলাম আমিও। যে কেউ শুনলে হাসবে আমাকে নিয়ে। কিন্তু এখনো আমি যখন ভাবি ওই সময়টার কথা; মনে হয়, যা করেছিলাম ঠিকই করেছিলাম। আর আমি মোটেও লজ্জিত না আমার কাজগুলোর জন্য।

ঈষাণ: কি?! তুমি?! তুমি পড়েছিলে প্রেমে?! এটাও সম্ভব? নাহ, আসলেই খুব অবাক হচ্ছি আমি। তুমি কারো প্রেমে পড়তে পারো সেটা বিশ্বাসই হয় না।

ইলানা: হ্যাঁ ভাই, আমিও প্রেমে পড়তে পারি। যদি কথা দাও পরে হাসাহাসি করবে না এটা নিয়ে, তাহলে কার প্রেমে পড়েছিলাম সেটা বলবো।


ঈষাণ: পাগল নাকি!! হাসাহাসি করবো কেন? কার প্রেমে পড়েছিলে বল।


ইলানা: ইউনিভার্সিটি থার্ড ইয়ারে যখন পড়ি, তখন আরিয়ান নামে একটা ছেলের সাথে খুব বন্ধুত্ব হয়। ও দেখতে যেমন সুন্দর, ব্যাবহারটাও তেমনি মিষ্টি। আর কতো কিছু যে জানতো ছেলেটা! এত সুন্দর করে কথা বলতো! ওর সাথে থাকলে কখনোই ক্লান্ত হতাম না। মনে হতো, ওর কথা শুনেই সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারব। 

আরিয়ান পড়তো সাইকোলজিতে। ওর সাথে থেকে থেকেই সাইকোলজির প্রতি অদ্ভুত এক আকর্ষণ জন্মালো আমারসাইকোলজির অনেক বই পড়ে ফেললাম নিজে নিজেই। আমার আগ্রহ দেখে আরিয়ান খুশিতে বাকবাকুম। অনেক দিন ধরেই ও চাচ্ছিল মনোস্তত্ত্ব বিষয়ে একটা মাসিক পত্রিকা বের করতে। আমাকে পেয়ে যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেলো। আর আমি ততো দিনে পড়ে গেছি গভীর প্রেমে। পত্রিকা বের করার কাজটা করলে ওর সাথে আরো অনেক সময় কাটাতে পারব আর এই ফাঁকে ওকে আমার মনের কথা বলার সুযোগও তৈরি হয়ে যাবে। এই ভেবে মহা উৎসাহে কোমর বেঁধে ওর সাথে কাজে লাগলাম আমি। অনেক খেটে ৪ পৃষ্ঠার একটা পত্রিকা বেরও করে ফেললাম আমরা। ইউনিভার্সিটিতে ব্যপক আলোড়ন তুললো সেই পত্রিকা। আর এই এক মাসে আমরা আরো অনেক কাছাকাছি চলে এলাম একজন আরেক জনের। 
পত্রিকার নাম 'নাইনথ ওয়েইভ' রেখেছিল আরিয়ান। আমরা সব সময় একটা রেস্টুরেন্টের নয় নম্বর টেবিলে বসে পত্রিকার কাজ করতাম। ওই নয় নম্বর টেবিলে বসেই আমাদের মস্তিষ্কে আইডিয়ার ঢেউ উঠতো বলে 'নাইনথ ওয়েইভ' নাম রাখা হয়। তার আচার আচরণ, কথা-বার্তা শুনে আমার মনে হতে লাগলো সে-ও আমাকে অন্য রকম ভাবে পছন্দ করতে শুরু করেছে। মাঝে মধ্যে কাজ করতে করতে দেরি হয়ে গেলে আমাকে জোর করে রাতের খাবার খাইয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসতো। রিক্সা করে ফেরার সময় বলতো, 'প্লিজ আমার হাত ধরে রাখো, আমার ভয় করে, যদি রিক্সা থেকে পড়ে যাই।?' আমিও মনের সুখে আরিয়ানের হাত ধরে রাখতাম পুরো রাস্তা।
মাঝে একবার জ্বর হয়েছিল বলে কাজ করতে পারিনি বেশ কিছুদিন। আরিয়ান তখন প্রত্যেকদিন ক্লাস শেষ করে, পত্রিকার কাজ শেষ করে, আসত আমার বাসায়। প্রতিবারই ফল-মূল, চকোলেট বা কিছু না কিছু নিয়ে আসতো। সেই সময় আমার ভালবাসা তুঙ্গে পৌঁছালো। জ্বর যখন প্রায় সেরে এসেছে, তখন একদিন আরিয়ানকে সাহস করে বলেই ফেললাম আমার মনের কথাটা। শুনে আরিয়ান এতোই অবাক হলো যে ওর হাত থেকে চায়ের কাপ-টা পড়ে ভেঙ্গে গেলো।
শুকনো ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো খাবি খেতে খেতে আরিয়ান বললো, 'ইলানা, আমিতো সমকামী। তুমি জানতে না? কখনো বোঝোনি? আসলে আমারই ভুল। তুমি আমার এতো ভাল বন্ধু, তোমাকে বললেই পারতাম খোলাখুলি। আসলে আমাদের দেশে এখনো এই ব্যপারটাকে এতো ছোট চোখে দেখে যে আমি সাহসই পাই না কাউকে বলার' 
আমার হাত থেকে চায়ের কাপটা পড়ে ভাঙ্গেনি। কিন্তু আমার হৃদয়টা ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে গেছিল ওই দিন। এতো অসহায় কখনো লাগেনি নিজেকে। আরিয়ানের অদ্ভুত মিষ্টি কিন্তু মেয়েলি স্বভাবের কারণটা বুঝতে পারলাম এতো দিনে। রিক্সায় উঠলে আসলেই ভয় পেতো বলে আমার হাত ধরে রাখতো সে। হাত ধরার পেছনে লুকানো কোন ভালবাসা ছিল না। 
প্লিজ ঈষাণ, হেসো না। ধুর, এই জন্যেই বলতে ইচ্ছা করে না কাউকে 

ঈষাণ: সরি সরি। এটা মোটেই হাসির কোন গল্প না কিন্তু কেন জানি হাসি থামাতে পারছি না। প্লিজ কিছু মনে কোরো না।


ইলানা: না, আসলেই হাসির কোন গল্প না এটা। আমি চোখে অন্ধকার দেখছিলাম তখন। মনে করেছিলাম আমার ভালবাসার তীব্রতা দিয়ে আরিয়ানকে বাধ্য করতে পারব আমাকে ভালবাসতে। চূড়ান্ত পাগলামী করেছিলাম টানা ছয় মাস। এর মধ্যে দুইবার আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন কিছুতেই কিছু হয়নি। ও কখনোই আমাকে ভাল বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু মনে করেনি, করা সম্ভবও ছিল না ওর পক্ষে। কাজের কাজ যেটা হল, আমি খুব ভাল একটা বন্ধু হারালাম। শেষ দিকে আরিয়ান এতোই বিরক্ত হয়ে উঠেছিল যে আমার সাথে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। 


       রিক্সা এখন সিটি কলেজের সামনে। হঠাৎই ইলানা রিক্সাটাকে দাঁড়াতে বলে।

আচ্ছা, আজকে সোমবার না? আলিয়াঁস ফ্রাসেসে নাচের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা আজকে থেকেই। ইশ মনেই ছিল না। ঈষাণ, আমি খুবই সরি; কি কি কাজ আছে খেয়াল না করেই বের হয়ে পড়লাম তোমার সাথে। প্রথম ক্লাসটা মিস করতে চাই না। এখন আমি যাই? কালকে তোমার সাথে দেখা করি? তুমি ফ্রি থাকবে?

ঈষাণ: অবশ্যই ফ্রি থাকবো। যেতে যখন হবেই, যাও। কাল পর্যন্ত ভাল থেকো....

       ঈষাণকে কথা শেষ করতে না দিয়েই আলিয়াঁস ফ্রাসেসের দিকে দৌড়াতে শুরু করে ইলানা। যতোক্ষণ ইলানাকে দেখা যায় ততোক্ষণ তাকিয়ে থাকে ঈষাণ। তারপর রিক্সা ঘুরাতে বলে।
ইলানার সাথে গল্প করতে খুব ভাল লাগে। মন ভাল হয়ে যায় সব সময়। কিন্তু আজকে কেমন যেন একটা অতৃপ্তি রয়ে গেল। আরো অনেক্ষণ ইলানার সাথে থাকতে পারলে ভাল হতো। ইলানা যেমন আরিয়ানের কথা শুনে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারত, ঈষাণেরও মনে হচ্ছে ইলানার কথা শুনে সে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।    




Sunday, October 7, 2012

পর্দার আড়ালে : ডিজনির প্রথম অ্যানিমেশন

১৯৩৭ সালে মুক্তি পাওয়া ডিজনির প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য অ্যানিমেশনটি ছিল 'স্নো ওয়াইট এন্ড দ্য সেভেন ডুওয়ার্ফস। পঁচাত্তর বছর আগে অ্যানিমেশন ফিল্ম বানানোটা এত সহজ ছিল না। তখন ছিল না কোন কম্পিউটার, কোন প্রযুক্তি। ঠিক কিভাবে ঐ সময় এমন একটি ফিল্ম বানানো হয়েছিল, সেটা বোঝার জন্য যেতে হবে সে সময়ের ডিজনি স্টুডিওর ভেতরে।

সাতশ'রও বেশি সৃজনশীল কর্মী তখন দিন-রাত খেটে কাজ করেছেন এই পরীক্ষামূলক অ্যানিমেশনটির জন্য। প্রথম কাজ ছিল একটা চমৎকার গল্প খুঁজে বের করা। তার পর শুরু হয় আসল কঠিন কাজ।

প্রতিটা ফ্রেমের প্রতিটা ছবি আঁকতে হয়েছে তাঁদের নিজ হাতে। অনেক আঁকি-বুঁকির পর তাঁরা শেষ পর্যন্ত কয়েকশ' খসড়া ছবি দাঁড় করায়। ওদিকে স্ক্রিপ্ট আর ডায়ালগ তৈরি করে ফেলেন পরিচালক। এরপর সঙ্গীত পরিচালকদের সাহায্যে তৈরি করেন প্রতিটি দৃশ্যের জন্য মিউজিক।

টেস্ট ক্যামেরা ডিপার্টমেন্টে অ্যানিমেটরদের খসড়া ড্রইংগুলোর ছবি তুলে ফেলা হয় সিকুয়েন্স অনুযায়ী। অ্যানিমেটর প্রজেক্টরের সাহায্যে দেখে নেন ছবিগুলো কতোটা ভাল হয়েছে।

যথেষ্ট ভাল হলে, হাজার হাজার পেন্সিলে আঁকা ছবি চালান করে দেয়া হয় ইংকিং ডিপার্টমেন্টে। এখানে শত-শত মেয়ে ড্রইংগুলোকে স্বচ্ছ সেলুলয়েড দিয়ে ঢেকে দেন। তারপর তাঁরা প্রত্যেকটি লাইন কালি দিয়ে ট্রেইস করেন। এবার ছবিগুলো তৈরি হয়ে যায় শেষ প্রক্রিয়াটির মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য। সেটি হল, ছবিগুলোকে রং করা। ল্যবরেটরিতে অভিজ্ঞ রসায়নবিদরা এই অ্যানিমেশনের জন্য তৈরি করেছিলেন ১৫ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন শেডের রং। সেই রং দিয়ে ছবিগুলোতে প্রাণ দেওয়া হয়। অন্য দিকে একই সাথে আঁকা হতে থাকে ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টেজ সেটিং এর ছবি। ছবিগুলো আঁকা হয় জল রঙে।

কিন্তু আসল কাজ এখনো বাকি। সেলুলয়েড আর ব্যাকগ্রাউন্ডকে একসাথে করে মাস্টার ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা হয়। এর পর ফিল্ম চলে যায় টেকনিশিয়ানদের হাতে। আর রেকর্ড হতে থাকে সাউন্ড এফেক্ট। সব শেষে ফিল্মটির জন্য রেকর্ড করা হয় অর্কেস্ট্রার মিউজিক।

আর এর সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় বিশ্বজুড়ে অ্যানিমেশনের ইন্দ্রজাল।

Saturday, October 6, 2012

ইউ-টু


আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশের চেয়ে খুব বেশি উন্নত ছিল না কিছু দিন আগেও। ৭০-এর দশকে হঠাৎ করেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে আইরিশ সংস্কৃতিতে। সে সময়কার যুব সমাজের মধ্যে থেকে যে ক’টা চেহারা পুরো পৃথিবীতে পরিচিত হয়ে যায়, তাদের মধ্যে চার জন হল, পল ডেভিড হিউসন ওরফে বনো, ডেভিড হাউয়েল ইভ্যানস ওরফে দ্য এজ ( the edge), অ্যাডাম ক্লেটন আর ল্যারি মিউয়েল জুনিয়র।
এই চারজন মিলে ১৯৭৬ সালে গড়ে তোলে ইউ-টু ব্যান্ডটি। পাঙ্ক থেকে শুরু করে রক পর্যন্ত সব ধরণের মিউজিকই কম্পোজ করেছে ব্যান্ডটি। যখন তৈরি হল এই ব্যান্ড, তখন এর সদস্যরা মাত্র টিনেজার। কিন্তু দশক ঘুরতে না ঘুরতেই তারা প্রথম সারির আন্তর্জাতিক পারফর্মার হয়ে দাঁড়ালো। ১৯৮৭ সালে বের হল তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া অ্যালবাম, দ্য জশুয়া ট্রি’। রোলিং স্টোনস ম্যাগাজিন প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে লিখেছিল, ‘বীর বিপ্লবী থেকে মহাতারকায় পরিণত হয়েছে ইউ-টুর সদস্যরা’।

এ পর্যন্ত তারা ১২টি অ্যালবাম মুক্তি দিয়েছে, যার ১৫০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে বিশ্বব্যাপী। আর অসাধারণ সব গান গেয়ে ঝুলিতে ভরেছে ২২টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড,  যা পৃথিবীর অন্য যে কোন ব্যান্ডের চেয়ে বেশি। সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ শিল্পীর তালিকায় যে তাদের নাম থাকবে তা তো খুবই স্বাভাবিক। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় জুড়েই তারা যুদ্ধ করে গেছে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার জন্য। প্রায় চার দশক ধরে একই রকম জনপ্রিয়তা ধরে রেখে এখনো দর্শক মাতিয়ে চলেছে ইউটু।  

Wednesday, September 19, 2012

সম্পর্ক শেষ


১৩ই সেপ্টেম্বর, সকাল ৬:৩০

লুবনার ঘুম ভাঙল স্বামীর গালাগালিতে। প্রতিটা দিন গালিগালাজ শুনে ঘুম থেকে উঠতে ভাল লাগে না। গত বছরই বিয়ে হল। বাবা-মায়ের পছন্দের ছেলেটাকেই বিয়ে করতে হয়েছিল লুবনার। যেই ছেলেটার সাথে সম্পর্ক ছিল, তাকে ছেড়ে এসেছিল বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। বিয়ের পর প্রথম এক সপ্তাহ কেটেছিল খুব আনন্দে। মনে হয়েছিল বাবা-মার কথায় বিয়ে করার সিদ্ধান্তটা বিচক্ষণ ছিল। প্রথম সপ্তাহের আনন্দে গা ভাসিয়ে লুবনা তার স্বামীকে সব কথাই বলেছিল বিশ্বাস করে। স্বামী খুব মন দিয়ে শুনেছিল লুবনার প্রথম প্রেমের গল্প। ঠিক ৮ দিনের মাথায় শুরু হয় ঝামেলা। ওই দিন প্রথমবারের মত কুৎসিত ভাষায় গালি দেয় তার স্বামী। গালি দেওয়ার কারন, লুবনা নাকি নষ্ট হয়ে যাওয়া মেয়ে। আগের প্রেমিকের সাথে নাকি এখনো তার শারিরীক সম্পর্ক রয়েছে। লুবনা আকাশ থেকে পড়েছিল। কান্নাকাটি করে ভাসিয়েছিল। অনেক অভিমান হয়েছিল। অনেক চেষ্টা করে তার স্বামীকে বোঝাতে পেরেছিল, অতীত ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করেছে সে এবং এখন শুধু তাকেই ভালবাসে। স্বামীও মনে হয় বুঝতে পেরেছিল। কারন এরপর থেকে আবার শুরু হয় তাদের সুখের জীবন। বেশ ক’মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর লুবনা অনুভব করে তার শরীরে নতুন একটা প্রাণের অস্তিত্ব। আনন্দ আর উত্তেজনায় রাতে ঘুম হয় না তার। ঠিক করে, পর দিন রাতে স্বামীর জন্য বিশাল আয়োজন করে রান্নাবান্না করবে। খাওয়ার পর ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগে খুশির খবরটা দেবে স্বামীকে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। কিন্তু খবরটা শুনে লুবনার স্বামী ঠিক যেন খুশি হল না। একটা কথাও না বলে গম্ভীর মুখে ঘুমাতে গেল। পরদিন সকাল থেকেই শুরু হল আবার গালিগালাজ। অবলিলায় ভয়ঙ্কর সব কথা বলে যেতে থাকল লুবনার স্বামী। এবার অবশ্য আর থামেনি অকথ্য ভাষার গালি। রুটিন করে সকালে ঘুম থেকে উঠে এক ঘন্টা গালি, আবার রাতে বাসায় ফিরে এক ঘন্টা গালি। স্বামীর বদ্ধমূল ধারনা, লুবনার গর্ভে এসেছে তার আগের প্রেমিকের সন্তান। লুবনা প্রথম প্রথম বোঝানোর চেষ্টা করেছে। মাসের পর মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও স্বামীকে বোঝাতে পারে না যে এটা তারই সন্তান। আগে দুঃস্বপ্নের মত মনে হলেও এখন গা সওয়া হয়ে গেছে পুরো ব্যাপারটাই। কিছুতেই আর কিছু যায় আসে না। কেমন যেন আচ্ছন্নের মত জীবন কাটাচ্ছে লুবনা। প্রতিদিন একরকম অপেক্ষাই করতে থাকে গালিগালাজের জন্য। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর পাঁচটা মাস পার হয়ে গেছে। আর ক’মাস পরই এই পৃথিবীর মুখ দেখবে নতুন একটা প্রাণ।

আজ সকাল থেকেই যেন মন কেমন করছে। অন্য দিনের মত স্বামী কাজে বের হয়ে যাওয়ার পর লুবনা একটা কাল সূতির শাড়ী পরে খুব সুন্দর করে সেজে বাসা থেকে বের হয়...



১৩ই সেপ্টেম্বর, দুপুর ১২:০০

ফারহানার বুক ধড়ফড় করছে। প্রেগনেন্সি টেস্টের স্ট্রিপটা চোখের সামনে ধরে নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে আছে সে। ধীরে ধীরে ভেসে উঠল লাল রঙের ছোট্ট দু’টা দাগ। চোখের সামনে যেন তার পৃথিবীটা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। মাত্র ১৭বছর বয়স তার। সামনে এসএসসি পরীক্ষা। এখন তার সবটুকু মনযোগ থাকা উচিত পড়াশোনার দিকে। কিন্তু কিভাবে সে পড়তে বসবে? বয়ফ্রেন্ডের সহজ সরল অনুরোধ ফেলতে না পেরে ভয়ঙ্কর ঝুঁকিটা নিয়ে নেয় সে। তখন নতুন ধরনের উত্তেজনায় এত কিছু মাথায় আসেনি। এর ক’দিনের মধ্যেই বয়ফ্রেন্ড আরেকটা মেয়ের জন্য নির্বিকার ভাবে তাকে ছেড়ে চলে যায়। ফারহানা বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে এতোই ব্যাস্ত ছিল যে ধীরে ধীরে তার দূরত্ব বেড়ে যায় অন্য বন্ধুদের সাথে। এখন মনখুলে কথা বলার বা পরামর্শ করার মত মানুষও নেই তার জীবনে।

প্রেগনেন্সি টেস্টের স্ট্রিপটা এক হাতে ধরে রেখে অন্য হাতে মোবাইল ফোনটা নিয়ে ফারহানা কল করে সেই বয়ফ্রেন্ডের নম্বরে। ফোন ধরে সেই মেয়েটি, যার জন্য বয়ফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে চলে গেছিল। ফোন ধরেই বলল, ‘হ্যালো ফারহানা, তুমি এখনো কেন ওকে যন্ত্রণা করছ? কেন বুঝতে পারছ না ও এখন আমার সাথে আছে? প্লিজ তুমি আর কখনো এই নম্বরে ফোন করবে না’। ফারহানাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিল মেয়েটি। ফারহানার শরীর কাঁপতে থাকে। নিজের অজান্তেই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে নোনা পানি।

কয়েক ঘন্টা পর কিছুটা ধাতস্ত হয়ে সে প্রথমেই ফোন করে তার এক বড়লোক সহপাঠীকে। ফারহানার এখন বেশ কিছু টাকা দরকার। সহপাঠী তাকে টাকা দিতে পারবে শুনে একটুও দেরি না করে বাসায় যেই শর্টস আর টি-শার্ট পরে ছিল, সেটা পরেই বের হয়ে পড়ল সে...



১৩ই সেপ্টেম্বর, দুপুর ১:৪৭

অফিসের লাঞ্চব্রেকে ছুটতে ছুটতে ছোট ছেলে আর মেয়েকে ডে-কেয়ার সেন্টার থেকে আর বড় ছেলেকে স্কুল থেকে তুলে বাসায় ফিরল ঝর্ণা। ফিরেই ফ্রিজ থেকে ৩ দিন আগে রান্না করে রাখা খাবার বের করে গরম করতে শুরু করে সে। কোন রকমে বাচ্চাগুলোকে খাইয়ে আবার দৌড়াতে হবে অফিসে। তিন মাস হল তার শরীরের মধ্যে বড় হচ্ছে তাদের চার নম্বর বাচ্চাটা। এত ধকল আর সহ্য হয় না। সহজ সরল ভাল মানুষ বরটা আবারো তার চাকরি হারিয়েছে অফিসে মদ খেয়ে মাতলামি করার কারনে। আজ বাচ্চাদের তুলে বাড়ি ফেরার কথা ছিল বরেরই। কিন্তু ১২টার দিকে ফোন করে সে জানিয়েছে তার শরীর খারাপ তাই ঝর্ণাকেই যেতে হবে বাচ্চাদের আনতে। খাবার গরম করে বেড রুমে ঢুকে সে দেখল, যা ভেবেছে তা-ই। বরটা আয়েশ করে বিছানায় বসে মদ খাচ্ছে। দেখামাত্র মাথায় রক্ত চড়ে গেল ঝর্ণার।

সে তো কখনোই এরকম জীবন চায়নি। বাবা-মায়ের আদরের ছোট মেয়ে। সারা জীবন পড়াশোনায় ভাল ছিল। একটা এনজিওতে ঈর্ষণীয় বেতনের চাকরি করে। তার জীবনটা হওয়ার কথা রূপকথার রাজকন্যাদের মত আরামের, আনন্দের। দেশে দেশে ঘুরে ছুটি কাটিয়ে বেড়ানোর কথা তার। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘সুখহীন নিশিদিন পরাধীন হয়ে’ বেঁচে থাকার কথা না।

হঠাৎই বাচ্চাগুলোর ওপর প্রচণ্ড রাগ হল ঝর্ণার। বাচ্চাগুলোই যত নষ্টের মূল। ওরা না থাকলে সে কত আরাম করেই না থাকতে পারত! কত নির্ঝঞ্ঝাট হত জীবন। এখন সংসারে যোগ হতে যাচ্ছে আরেকটি নতুন মুখ।

বরের হাত থেকে মদের গ্লাসটা নিয়ে দেওয়ালে ছুঁড়ে মেরে বাসা থেকে বের হয়ে যায় ঝর্ণা। মাইক্রোওয়েইভ ওভেনেই পড়ে থাকে গরম করা খাবারগুলো। বের হয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আজ আর সে অফিসে ফিরবে না...



১৩ই সেপ্টেম্বর, বিকাল ৫:৫৫

দাঁতে দাঁত চেপে মানুষরূপী দানবটার মার সহ্য করছে অন্তরা। অসুরের মত শক্তি লোকটার গায়ে। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে কোন লাভ নেই। সহ্য করতে হবে যতক্ষণ জ্ঞান থাকে। কিল-ঘুষি-চড় শেষ হয়েছে। এখন চলছে লাথি। এইতো, আর বেশিক্ষণ সহ্য করতে হবে না। মার খেতে খেতে অচেতন হয়ে পড়ে সে।

যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন পুরো বাড়ি অন্ধকার। লোকটা বাসায় নেই। ফুলে ওঠা মারের দাগগুলো দেখতে দেখতে সে ভাবা শুরু করে। ভেবে ভেবে কূল পায় না। কি করে সে ওই লোকটাকে ভালবেসেছিল? বিয়ের আগে যখন তারা প্রেম করত তখনো এক-দু’বার গায়ে হাত তুলেছিল ওই জানোয়ারটা। তখন অন্তরা ভেবেছিল, বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে। ভাবনাটা যে কতটা ভুল ছিল তা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। বিয়ের পর যেন দ্বিগুণ উৎসাহে নিজের সম্পত্তি মনে করে দানবটা তাকে পেটানো শুরু করল। তখন অন্তরা নিজেকে বুঝিয়েছে, আর মাত্র ক’টা দিন, তারপর একটা ফুটফুটে বাবু ঘরে এলেই লোকটা বদলে যাবে। এখন সে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই সাত মাসে বদলায়নি কিছুই।

আহত শরীরটাকে টেনে টেনে সে কোন রকমে একটা কাপড় পরে নেয়। তারপর আলমারি থেকে কিছু টাকা বের করে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়...



১৪ই সেপ্টেম্বর, সকাল ৮:১৫

সকালে সিটি কর্পোরেশনের নীল ট্রাকটা এসে থামে যাত্রাবাড়ির এক ডাস্টবিনের সামনে। ট্রাক থেকে ঝটপট তিনজন লোক নেমে ডাস্টবিনের ময়লাগুলো ট্রাকে তুলতে থাকে। ময়লা তুলতে তুলতে হঠাৎ অন্য রকম একটা বস্তা দেখতে পায় গিয়াস। কৌতুহলী হয়ে বস্তা খুলে সে যা দেখে, তাতে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। ভক করে নাকে এসে লাগে সেই পরিচিত গন্ধটা। এই গন্ধ আগে সে একবারই পেয়েছে। রোড-অ্যাক্সিডেন্টে তার মা মারা যাওয়ার পর ২ দিন সেই লাশ পড়ে ছিল মর্গে। দু’দিন পর গিয়াস মর্গে গিয়ে লাশ দাবি করে। সেখানেই সে পেয়েছিল এই গন্ধ। নাড়ী উল্টে বমি আসার কথা। কিন্তু গিয়াসের বমি আসছে না। হতবিহবলের মত চারটা ছোট্ট ছোট্ট মৃত ভ্রুণের দিকে তাকিয়ে থেকে সে ভাবে, ‘এত সহজ?... এত সহজ?..... এতই সহজ জীবনের সবচেয়ে খাঁটি, সত্য আর নিষ্পাপ সম্পর্কটা শেষ করে ফেলা?’











Monday, June 4, 2012

gibberish


i've been awake for more than 36 hours now.. and i have nothing better to do at the moment... so here comes the gibberish...

1. the strongest thing in the world: emotions (they can make you conquer the world and they can make you kill yourself)
2. one thing to live for: family (you can never really make it on your own.. family is like the savior angel)
3. the most beautiful thing in the world: human psychology ( its so complex that you'll lose yourself in it and you'll never get bored.. every moment is a surprise if you dwell in human psychology)
4. arch enemy: time (if only i could defy time!)
5. the scariest thing in the world: future
6. the toughest thing to do: saying goodbye to someone for ever.
7. the most difficult thing: falling asleep
8. one thing i wouldn't want to lose: my mind
9. one thing that can always make me happy: pool of water
10. one thing to die for: well... there's nothing i would die for
11. one thing i don't have: order (structure) in life  
12. the most powerful thing in the world: honesty
13. the most precious thing in the world: myself :P

Wednesday, February 22, 2012

সম্পর্ক-৩

রাহাত ঢাকা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছিল। আসলে খুঁজছিল। প্রায় আধ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর খুঁজে পায় সে। তার আজকের শিকারটি লম্বা এবংসুন্দরী।বাদাম খেতে খেতে এগিয়ে যাচ্ছে। চেহারায় বোকা বোকা একটা ভাব আছে। বয়স খুব বেশি হবে না। মনে হয় কলেজে পড়ে। সে যখন মেয়েটার পাশ ঘেঁষে এগিয়ে যাওয়ার সময় আস্তে করে জায়গা মত হাত দিয়ে দেবে, তখন মেয়েটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অস্বস্তিতে কুঁকড়ে যাবে। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারবে না। চমৎকার, এই তো চাই।
বহুদিন ধরেই কম বয়সী, মিষ্টি কিন্তু বোকা চেহারার মেয়েদের গায়ে হাত দিয়ে আসছে রাহাত। কিন্তু এখনো ভীঁড়ের মধ্যে মিশে মেয়েটার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় টান টান উত্তেজনা অনুভব করে সে। ধমনীর মধ্যে রক্তকণাগুলো মনে হয় আলোর বেগে ছুটছে। আর দু’জন মানুষ পার করলেই মেয়েটার ঠিক পেছনে চলে যাবে রাহাত।
এরপরের ঘটনাগুলো ঘটল চোখের নিমেষে। পেছন থেকে মেয়েটার বুকে আলতো একটা চাপ দেওয়া মাত্র মেয়েটা ঘুরে দাঁড়িয়ে তীব্র দৃষ্টিতে সরাসরি তাকায় রাহাতের চোখের দিকে। হঠাৎ করে ভয়ের একটা শিহরণ খেলে যায় রাহাতের শরীরে। হাত –পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। কিন্তু চেহারায় সেটা প্রকাশ পায় না। নির্বিকার মুখে সেও তাকিয়ে থাকে মেয়েটার চোখের দিকে। মেয়েটা হাত তোলে চড় মারার জন্য। রাহাত প্রস্তুত ছিল। তাই সে খপ করে মেয়েটার হাত ধরে ফেলে, আর কিছু না ভেবেই কষে একটা চড় বসিয়ে দেয় মেয়েটার গালে। এবার মেয়েটা পা চালানো শুরু করে। ঝড়ের বেগে লাথি মারতে মারতে চিৎকার করতে থাকে, ‘মা.. মা.. আমাকে ফেলে এতো সামনে চলে গেছ কেন? এক্ষুনি ফিরে আস’। এবার রাহাত বুঝতে পারে বোকা-সোকা মেয়েটার রুখে দাঁড়াবার মতো এত সাহস কোথা থেকে এসেছে। কি করবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাহাতের ওপর চড়, কিল, ঘুষির বৃষ্টি শুরু হলো। মেয়েটার মায়ের সাথে যোগ দিল অতি উৎসাহী পথচারিরা।
সেদিন রাহাত কিভাবে বাড়ি ফিরেছিল সে মনে করতে পারে না।

ঐ দিনের ঘটনার দশ বছর পর একদিন খবরের কাগজের পাতা উল্টানোর সময়, ইভ টিজিং-এর জন্য আত্মহত্যার একটা খবর পড়তে গিয়ে হঠাৎই থমকে যায় মেয়েটা। ব্যস্ততার মাঝেও অনেকটা সময় নিয়ে চিন্তা করে তার নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে। তার খুব জানতে ইচ্ছা হয় ঢাকা কলেজের সামনের ঐ ছেলেটা গণপিটুনি খাওয়ার পর আর কখনো কোন মেয়ের সাথে ওসব করার চেষ্টা করেছিল কিনা।
মেয়েটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে, ছেলেটার সাথে তার জীবনের ২০টি মিনিট কেটেছে। ভয়ঙ্কর ২০টি মিনিট। ভয়ে, রাগে, দুঃখে, লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করেছিল সেদিন। ছেলেটাকে সে এতদিন মনে রেখেছে। এবং তীব্র ঘৃণা নিয়ে তাকে সারা জীবন মনে রাখবে।

Wednesday, January 18, 2012

Poem Contest


It all started with the line from the song, ‘colors of the wind’…
(colors of the wind):
but still i cannot see,
if the savage one is me...
how can there be so much that you don't know....!!!
(anupam):
but i can see,
light of sea,
when the crowd fades out, stands lonely me.....!!!!!
(twisha):
but if you see closely,
you'll find warmth only...
the whole universe is surrounding you truly,
with all its intensity, not to let you be lonely...
(anupam):
But that warmth is only inception,
to be lonely in a ocean of crowd…
now or never, the truth is not to mention.....
(twisha):
i say, embrace the inception,
welcome the illusion,
at least you'll have the warm delusion...
slowly you'll slip into the realization,
that the inception is created by your own imagination...
(anupam):
to embrace the illusion,
is not the ultimate solution,
poor oh you, yet looking for the meaning of life,
ask me, it's nothing, has no definition.....
(twisha):
darling, not looking for the definition...
just you do the contemplation,
let it lead you to the introspection,
you might discover a new vision...
(anupam):
then drop the debate and give a try,
she will forgive me by and by,
but truth or illusion does it matter?
I know it won't be better,
life has become sour to me,
without her how can I be....
___________________________________________________

many months later....

(twisha):
without her how can you be?
ask thyself oh poor thee.
things are better now, can you see?
she's been replaced by the new 'she'.
(anupam):
now, don't call me a poor one,
let's do what needs to be done,
give me all your sweet love,
like i'm a trap, you be a dove,
be a half or more of me,
I LOVE YOU my sweet thee.

ছায়ানটের পঞ্চাশ বছর (সনজিদা খাতুনের সাক্ষাতকার)

সনজিদা খাতুন:


যেদিন ছায়ানটের পঞ্চাশ বর্ষপূর্তি আনুষ্ঠান হচ্ছিল, সেদিন ছেলে-মেয়েদের চোখে জল ছিলআমিতো মনে করি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য এখানেইছায়ানট গড়েছি এবং ছায়ানটের ছেলে-মেয়েদেরকে পঞ্চাশ বছর ধরে শুদ্ধ সংস্কৃতির শিক্ষা দিয়ে আসছি তারাই প্রকৃত বাঙালী হয়ে বিশ্বের কাছে বাঙালী হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবে ছায়ানটের নিয়ম হলো, সপ্তাহে দুটো দিন মেয়েদের শাড়ী আর ছেলেদের পাঞ্জাবী পরে আসতে হয় তারা শার্ট-প্যান্ট, কোট-টাই পরে আসতে পারে না এতে করে তাদের মনের ওপর একটা প্রভাব পড়ছেছায়ানটের একটা কর্মীবাহিনী দাঁড়িয়ে গেছে তারা দেশে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বিদেশেও বাঙালীর শুদ্ধ সংস্কৃতির পরিচয় তুলে ধরছে এরাই ভবিষ্যতে ছায়ানটকে এগিয়ে নিয়ে যাবে

২০০১ সালে যখন রমনা বটমূলের পহেলা বৈশাখ আনুষ্ঠানে বোমা হামলা হলো,  তখন আমরা বুঝতে পারি, আমাদের এই শিক্ষাটা শেকড় পর্যন্ত যাচ্ছে না বাঙালীকে প্রথমে মানুষ হিসেবে, বিশ্বমানব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে তখন আমরা শিশুদের জন্য একটি স্কুল করার সিদ্ধান্ত নেই এই স্কুল, নালন্দায় বাচ্চাদের বাংলা শেখানো হয়, পাশাপাশি তারা ইংরেজিতেও দক্ষতা অর্জন করে তারা গণিত বিজ্ঞান শেখেএর মধ্যে আমাদের আরো একটি নতুন কার্যক্রম শুরু হয়েছে কার্যক্রমটির নাম শিকড় সেখানে আসে অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিশুরা তাদেরকে নাচ-গান শেখানো হয় তারা জানে না আট কড়াই কি আট কড়াই হলো আট রকমের কড়াই ভাজা এসব আহারের মধ্য দিয়ে ওরা গ্রামীণ সংস্কৃতির পরিচয় লাভ করে

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরামুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা নামে একটা দল গঠন করি এই দলে ছায়ানটের অনেক শিল্পী ছিল আমি, ওয়াহিদুল, বেণু আমরা সবাই মিলে শুরু করেছিলাম এটা আমি ছিলাম সভাপতি, বেণু ছিল সাধারণ সম্পাদক সংস্থারই একটি দল নিয়ে বেণু, শাহীন সামাদ, নায়লা ওরা বেরিয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প এবং শরণার্থী শিবিরে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষকে গান শুনিয়ে তারা উদ্বুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে এই দলটি নিয়েই পরবর্তীতে তৈরি হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রমুক্তির গান এইভাবে আমরা একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম

পাকিস্তান আমলে, মোনেম খাঁ সরকারের সময় আমাকে, এটাকে ইংরেজিতে বলেপানিশমেন্ট ট্রান্সফার দেওয়া হয়েছিল আমি ছায়ানট করি বলেই এই শাস্তির ব্যবস্থা করেছিল সরকার এর ফলে একটা বড় সময় আমাকে আমার ছেলে-মেয়েদের ছেড়ে থাকতে হয়েছিল কিন্তু আমি দমে যাইনি ছেলে-মেয়েরাও কখনো কোন অভিযোগ করেনি তারা কখনো কিছু চায়নি


মুক্তিযুদ্ধের পরে নতুন করে ছায়ানট শুরু করি আমরা ছায়ানট সব সময় সচেতন ভাবে অরাজনৈতিক গঠনমূলক সাংস্কৃতিক সঙ্গঠন ছিল এবং এখনো আছে